The Ambassador News                                       দি অ্যাম্ব্যাসাডর নিউজ

সকল কণ্ঠের প্রতিনিধি

প্রোপাগান্ডা এবং ড. মুহাম্মাদ ইউনূস


এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা অনুযায়ী, Propaganda, dissemination of information—facts, arguments, rumours, half-truths, or lies—to influence public opinion. It is often conveyed through mass media. অর্থাৎ, প্রোপাগান্ডা হলো গণমাধ্যমে এমন ধরনের প্রচারণা যেখানে তথ্য বা ঘটনার সত্যতা, নিরপেক্ষতা প্রভাবিত হয় এমনকি অসত্য, মিথ্যা, অর্ধসত্য, বানোয়াট তথ্যও বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে প্রচারিত হয়। বাংলাতে ভাবার্থ করলে, প্রোপাগান্ডাকে ‘রাজনৈতিক প্রচারণা’ বলারও সুযোগ আছে। 

প্রোপাগান্ডা কেন তৈরি করা হয়, এর উদ্দেশ্য কী, কীভাবে কাজ করে এসব বিষয়ে গণযোগাযোগের ফিল্ডে অনেক তত্ত্বীয় আলোচনা আছে।১৯৮৮ সালে প্রকাশিত ‘Manufacturing Consent: The Political Economy of the Mass Media’  বইতে এডওয়ার্ড এস. হারম্যান এবং নোয়াম চমস্কি দেখিয়েছেন কীভাবে এবং কেন রাজনৈতিক অর্থনীতির কারণে গণমাধ্যম নানা ধরণের প্রোপাগান্ডা চালায় এবং এবং পদ্ধতিগতভাবে পক্ষপাতী হিসেবে কাজ করে থাকে। আমরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন অক্ষ শক্তি এবং মিত্র শক্তির গণমাধ্যম এবং পরবর্তীসময়ে স্নায়ুযুদ্ধ সময়কালীন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিউয়নের গণমাধ্যম লক্ষ্য করলেই প্রচারণার বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারি। কুয়েত দখল, ইরাক অভিযানের সময়ও জনগণকে পারস্যুয়েড (প্ররোচিত বা প্রভাবিত)  করতেও মার্কিন গণমাধ্যম নানা ধরণের প্রপগান্ডা চালিয়েছে। সাদ্দাম হোসেনও প্রোপাগান্ডার বলি হয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের সর্বশেষ শাসনামলেও একটি বিষয়ে অনবরত প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে। মূল ধারার গণমাধ্যম এতে অংশ কম নিলেও অনলাইন মাধ্যমে এবং কিছু পত্রিকায় বেশ জোরালোভাবেই নতুন নতুন রূপ এবং আবহে প্রোপাগান্ডা ফুটে ওঠেছে। আর সেই প্রোপাগান্ডার লক্ষ্যবস্তু ছিলেন ড. মুহাম্মাদ ইউনূস। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নোবেল পুরষ্কার পাওয়া বিশ্ববরেণ্য অধ্যাপক, সমাজ সংস্কারক, মাইক্রোক্রেডিট এবং মাইক্রোফিন্যান্সের পথিকৃৎ এই প্রথিতযশা মানুষটির সাথে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার দলের বাজে সম্পর্কই হয়তো এমন প্রোপাগান্ডার একটি কারণ। আরও কী কারণ ছিল তা বিশ্লেষণের ব্যাপার। কেন প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে সে বিষয়েও কোনো ব্যাখ্যা এখানে দিবো না। প্রোপাগান্ডাগুলো এখানে তুলে ধরাই আমার অভিপ্রায়। তবে, বেশ সফলভাবে তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে দেশের মানুষকে প্রভাবিত করতে পারার ক্রেডিট আওয়ামী লীগ এবং গণমাধ্যমগুলো পাবে।

 

একদিকে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীসহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ গণমাধ্যমে নিজেদের বক্তব্যের মাধ্যমে ড. ইউনূস সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। ‘সুদখোর’ , ‘অর্থ পাচারকারী’  ইত্যাদি ট্যাগ দেয়া থেকে শুরু করে তাঁর নোবেল পুরষ্কারসহ অন্যান্য পুরষ্কার পাওয়া নিয়েও মন্তব্য করেন। অন্যদিকে গণমাধ্যমগুলোও প্রচারণায় অংশ নেয়।

ভারত, জাপানসহ পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশে তাঁকে নিয়ে অ্যাকাডেমিকালি চর্চা হলেও আমাদের দেশের কেউ নিজে থেকে আগ্রহী না হলে তাঁর সম্পর্কে এতদিন জানতে পারে নি। বরং, সাধারণ মানুষের অনেকেই এখনও তাঁকে চেনে না বা চিনলেও সরকারের নিরন্তর প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে নেতিবাচিকভাবে চেনে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা না দিয়ে আমি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, অনলাইন মাধ্যমের কাটিং সংযুক্তি আকারে প্রদান করলাম। এতে পাঠকদের বুঝতে সহজ হবে, অন্তত আমার ব্যাখ্যা পড়ার চাইতে সহজ।










একটা কথা না বললেই নয়, ধর্মীয় আবেগ যেহেতু আমাদের চালিকাশক্তির অন্যতম প্রধান, বিগত রেজিম এই আবেগকে ব্যবহার করেও ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে। ‘ইসয়ারেয়েলের বন্ধুবা 'ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা বিরোধী' হিসেবেও তাঁকে আখ্যায়িত করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। অথচ, তিনি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছিলেন।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ড. ইউনূসের স্তুতি গাওয়া আমার লক্ষ্য নয়। তবে, মিথ্যাচার এবং ব্ল্যাক প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে একজন মানুষ সম্পর্কে বিরূপ জনমত তৈরি করার পেছনে কী কারণ বা কী উদ্দেশ্য লুকিয়ে ছিল বিগত রেজিমের, সেসব হয়তো ক্রমশই প্রকাশিত হবে

লেখক,

ব্লগার এবং শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

নবীনতর পূর্বতন