প্রায় দেড়শ’ বছরের ঐতিহ্য শেষ হতে চলেছে। বন্ধ হচ্ছে কলকাতার ট্রাম। দূষণমুক্ত ও নিরাপদ পরিবহন হিসেবে এটি একসময় ছিল কলকাতার লাইফলাইন। কালের নিয়মে সেই ট্রামের রাস্তায় উঠে এল বাস, ট্যাক্সিসহ অন্যান্য যানবাহন। এখন বলা হচ্ছে এর গতি মন্থর। ফলে এখন থেকে কেবল একটি রুটে থাকবে ট্রাম। এমনটাই জানিয়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী।
যানজট এবং দুর্ঘটনা এড়াতেই ট্রাম পরিষেবা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। তিনি বলেছেন, ‘এসপ্লানেড থেকে ময়দান পর্যন্ত হেরিটেজ আকারে একটি সুসজ্জিত ট্রাম থাকবে। যারা কলকাতায় আসবেন তারা চাপবেন। হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা চলছে। কোর্টও জানতে চেয়েছে আমাদের সিদ্ধান্ত, তা আমরা জানাবো। জয়রাইড বাদ দিয়ে বাকি কোনও রুটে ট্রাম চলবে না। লাইনও তুলে ফেলব। রাস্তা বাড়েনি। কিন্তু গাড়ি বেড়েছে। তাই যানজট হচ্ছে। এভাবে ট্রাম চালানো অসম্ভব।’
করোনা কাল থেকেই শহরে একের পর এক রুটে বন্ধ হয়েছে এই পরিষেবা। আপাতত হাতেগোনা চারটি রুট বেঁচে আছে। এবার তাও মুছে যাওয়ার পথে। এখন থেকে মডেল হিসেবে মাত্র একটি রুটে জয়রাইড হিসাবে ধর্মতলা-ময়দানের মধ্যে তা চলাচল করবে।
প্রসঙ্গত, শহরে ট্রাম পরিষেবা চালু রাখার দাবিতে ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করা হয়েছিল। সেই মামলায় রাজ্যের সিদ্ধান্ত জানতে চায় আদালত। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই আদালতের কাছে এই আবেদন জানাবে রাজ্য।
কলকাতার রাস্তায় খুব সকালে কিংবা গভীর রাতে ভরসা ছিল ট্রাম। ২০১৫ সালেও শহরের মোট ২৫টি রুটে চলত এই নির্ভরযোগ্য পরিবহণ। হাওড়া ব্রিজ পেরিয়ে একসময় হাওড়া স্টেশনেও যাত্রীদের পৌঁছে দিত ট্রাম। সেই ট্রাম চালানোয় অনীহা শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। ফলে একে একে বন্ধ হয়ে যায় কলকাতার জনপ্রিয় কিছু ট্রাম রুট। এর মন্থর গতির জন্য শহরে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ ছিল অনেকের।
উল্লেখ্য, ঐতিহ্যের পাশাপাশি উপযুক্ত পরিবহন হিসেবে লন্ডনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনও চলে ট্রাম ও ডবল ডেকার। আর কলকাতায় তুলে দেওয়া হচ্ছে সেই পরিষেবা। ১৮৭৩ সাল থেকে এই শহরে ট্রাম চলছে। নতুন সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে এই দীর্ঘ পথচলার এবার সমাপ্তি হতে চলেছে।
খবরঃ বাংলাট্রিবিউন