ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
পদত্যাগ করতে রাজি আছেন বলে জানিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আরজি কর মেডিকেল কলেজে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায়
জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধি দলের জন্য রাজ্য সরকারের সচিবালয় নবান্নে বৃহস্পতিবার
দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ওরা বিচার
চায় না। চেয়ার চায়। আমি পদত্যাগ করতে রাজি আছি।
লাইভ সম্প্রচার ইস্যুতে ভেস্তে গেল আলোচনা: দেশজুড়ে আলোচিত এ
ঘটনার সমাধানের দোরগোড়ায় এসেও মিললো না সমাধান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
সঙ্গে বৈঠকের জন্য নবান্নে উপস্থিত হয়েও বৈঠক করলেন না জুনিয়র চিকিৎসকরা। একাধিক
চিঠি-ইমেল, শর্ত আরোপ, শর্ত মেনে নেওয়া- দীর্ঘ ৫৬ ঘণ্টার নানা নাটকীয় পরিস্থিতি পার
করেও শুধুমাত্র একটি কারণে বৃহস্পতিবার বিকেলে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী ও জুনিয়র চিকিৎসকদের
বৈঠক ভেস্তে যায়।
চিকিৎসকদের দাবি- বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং না হলে তারা আলোচনায়
বসবেন না। অন্যদিকে, লাইভ স্ট্রিমিংয়ের শর্ত মানতে নারাজ রাজ্য সরকার। এমন অবস্থায়
প্রায় দুই ঘণ্টা নবান্নের সভাঘরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অপেক্ষা করার পরও
গেলেন না আন্দোলনকারীরা। বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর জুনিয়র চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে মমতা
বলেছেন, ওদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
এ দিন রাজ্যের সঙ্গে চিকিৎসকদের এই আলোচনার দিকে তাকিয়ে ছিলেন
গোটা দেশের মানুষ। নির্দিষ্ট পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে সরকারের বেঁধে
দেওয়া সময়ের কিছু পরেই নবান্নে পৌঁছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। কিন্তু বৈঠকের লাইভ সম্প্রচার
হবে না জেনে বৈঠক কক্ষের বাইরে অবস্থান নেন তারা। জুনিয়র ডাক্তাররা স্পষ্ট জানিয়ে দেন-
লাইভ স্ট্রিমিং ছাড়া কোনো আলোচনা হবে না। চিকিৎসকদের এ অনড় অবস্থানের কারণে প্রায়
দুই ঘণ্টা বৈঠক কক্ষে থাকার পরে বৈঠক বাতিল করে নিজের কার্যালয় ১৪ তলায় ফিরে যান মমতা।
এরপর আবার সভাঘরে ফিরে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি।
এ সময় ক্ষিপ্ত মমতা বলেন, ‘তিন দিন অপেক্ষা করলাম। ওরা এলেন
না। আজও দুই ঘণ্টার বেশি অপেক্ষা করেছি। আমার সঙ্গে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি
ও প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ছিলেন। ওরা এসে বৈঠক কক্ষে ঢুকলেনই না। কেন ঢুকলেন না জানি
না। তাও আমরা কোনো ব্যবস্থা নেব না। ছোট ভাইবোনেদের ক্ষমা করে দেব। ওরা ছোট, বড়দের
উচিত ছোটদের ক্ষমা করে দেওয়া। আমরাও ক্ষমা করে দেব।’
তিনি বলেন, ‘আমাকে অনেক অসম্মান করা হয়েছে। অনেক ভুল বোঝাবুঝি,
কুৎসা হয়েছে। সাধারণ মানুষ রঙ বোঝেনি। আমি পদত্যাগ করতে রাজি আছি। কিন্তু আশা করি,
মানুষ বুঝেছেন, ওরা বিচার চায় না। চেয়ার চায়।’
মমতা বলেন, ‘সরাসরি সম্প্রচারে আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু
এই মামলা যেহেতু সুপ্রিম কোর্টে চলছে তাই আমরা এমন কিছু করতে চাইনি যাতে অচলাবস্থা
চলতে পারে। চিঠিতে আমরা লিখেছিলাম, সরাসরি সম্প্রচার করতে পারব না।’
ক্ষমা চাইছি: এ সময় রাজ্যের আমজনতার উদ্দেশেও হাতজোড় করে ক্ষমা
চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার কথায়, ‘তিন দিনেও সমাধান করতে পারলাম না। বাংলার মানুষের
কাছে ক্ষমা চাইছি। কথা বললেই সমস্যার সমাধান হয়। জেদাজেদি করবেন না। এত মানুষ বিনা
চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। আমার হৃদয় কাঁদছে। ২৭ জন মারা গেছে। ৭ লাখ মানুষ চিকিৎসা পাননি।
ডাক্তারেরা ভগবান। কিন্তু আমার হৃদয় কাঁদছে।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বাইরে থেকে নির্দেশ আসছিল।
দুই-তিনজন রাজি হয়নি।’
মমতা আরও বলেন, ‘আশা করেছিলাম, ছোটরা এসে কথা বলবে। সুপ্রিম কোর্টের
নির্দেশ অনুযায়ী সময় পেরিয়ে গেছে। রাজ্য সরকার যা করবে, তাতে বাধা দেব না, জানিয়েছে
সুপ্রিম কোর্ট। আমি এটাকে ঔদ্ধত্য হিসেবে দেখছি না।’
স্বাস্থ্য ভবন ঘেরাও করে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন বৃহস্পতিবার
তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে। তাবু খাটিয়ে গত দু’রাত রাস্তাতেই অবস্থান নিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
তৃতীয় দিনে রাজ্যের স্বাস্থ্যসেবায় অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের পক্ষে আবারও আলোচনার
বার্তা দেওয়া হয় আন্দোলনরত চিকিৎসকদের। চিকিৎসকদের একাধিক দাবি-দাওয়া প্রথমে মানতে
না চাইলেও পরে মেনে নিয়েই আলোচনায় রাজি হয় রাজ্য সরকার।
হাত-পা বাঁধা মুখ্যমন্ত্রীর: জুনিয়র চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেওয়ার ক্ষেত্রেও কার্যত হাত-পা বাঁধা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। জুনিয়র
চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনোরকম ব্যবস্থা নেওয়া হলে গণহারে ইস্তফা দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন
রাজ্যের সিনিয়র চিকিৎসকরা।
তবে আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে এখনও আশাবাদী আন্দোলনকারীরা।
তারা বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছা আছে বলেও আমরা বিশ্বাস করি। তবে এ দিনের বৈঠক ভেস্তে
যাওয়ায় তারা যে কিছুটা হতাশ এ কথাও জানাতে ভোলেননি আন্দোলনকারীরা। ‘বাইরের কারও নির্দেশের’
যে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী করেছেন তাও উড়িয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা।
প্রশাসনিক ব্যর্থতাকেই দায়ী করলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা: নবান্নের
বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার জন্য প্রশাসনিক ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা।
জুনিয়র চিকিৎসকদের পক্ষে অর্ণব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘স্বচ্ছতার কারণেই আমরা লাইভ সম্প্রচারের
দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু কী অসুবিধা তা প্রশাসনের পক্ষে স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। শুনলাম,
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, উনি চেয়ার ছেড়ে দিতে রাজি আছেন। এটা শুনে আমরা হতাশ হয়েছি। কারণ,
চেয়ারের জন্য কোনো আলোচনা করতে আসিনি। আমরা এসেছিলাম ন্যায়বিচারের দাবিতে।’
আন্দোলনকারীরা জানান, ‘আমরা খোলা মনেই আলোচনা করার জন্য নবান্নে
এসেছিলাম। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন দু ঘন্টা ধরে এ কথা প্রশাসনের
পক্ষে আমাদের জানানো হয়নি।’