গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও সাবিনা ইয়াসমিন |
চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব গাজী মাজহারুল আনোয়ারের জন্মদিন আজ। এরইসঙ্গে
চলচ্চিত্র পরিচালনার ৪২ বছর পূর্ণ হলো তাঁর। গতকালই ছিলে এই বিশেষ দিনটি। বরেণ্য গীতিকবি
গাজী মাজহারুল আনোয়ার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘নান্টু ঘটক’ মুক্তি
পায় ১৯৮২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। এ প্রসঙ্গে গাজী মাজহারুল আনোয়ার তাঁর জীবদ্দশায় ‘অল্প
কথার গল্প গান’ বইতে লিখেছেন কিছু স্মৃতিকথা।
তিনি সেখানে উল্লেখ করেন, ‘‘আমার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র নান্টু
ঘটক। এর আগে ছবি প্রযোজনা করলেও আমার পরিচালনায় এটিই প্রথম চলচ্চিত্র। তার আগে সত্য
সাহা, আজিজুর রহমান, দিলীপ বিশ্বাস এবং আমি ‘চতুরঙ্গ’ কথাচিত্র
নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে সেখান থেকে বেশকিছু ছবি নির্মাণ করি। অনেক
স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্খা আর অনেক বড় একটি ঝুঁকি নিয়ে নান্টু ঘটক ছবির কাজ শুরু করলাম। ছবির
গল্প, চিত্রনাট্য, সংলাপ, সঙ্গীত এবং পরিচালনার সব দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ছবিটি শুরু করি।
তখন অনেকেই আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য
প্রখ্যাত শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি তখন সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে আমার কাছে
নিয়ে এসে বললেন, ‘গাজী ভাই আপনার তো শুধু গান গাওয়াটাই বাকি আছে। এত বড় একটা কাজে যখন
নেমেই পড়েছেন তখন আপনি বুলবুলকে আপনার সঙ্গে রাখেন। সে আপনাকে সঙ্গীত পরিচালনায় সহযোগিতা
করতে পারবে।”
তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল আমাকে এই ছবির সঙ্গীত
পরিচালনায় সহযোগিতা করেন। ছবিটির নির্মাণ কাজ শেষ হলো। ছবি মুক্তির জন্য যাবতীয় প্রস্তুতিও
শেষ করলাম। কিন্তু আমার পরিচালনায় প্রথম ছবি বিধায় ছবিটি মুক্তির ব্যাপারে তেমন কোনো
হল মালিকের তেমন আগ্রহ লক্ষ্য করা গেল না। এরপর একদিন বিটিভি কর্তৃপক্ষ ছবির ‘চলে আমার
সাইকেল হাওয়ার বেগে উইড়া উইড়া / ঢাকা শহর দেখমু আজ দুইজনে ঘুইরা ঘুইরা / ও পাবলিক ভাই
সাইকেলের ব্রেক নাই মইরো না নিচে পইড়া/ আমি যদি ছবির হিরো হইতাম কোমর দোলাইয়া তোমায়
নাচ দেখাইতাম...’ গানটি টেলিভিশনে প্রচার করলেন। আশ্চর্যজনকভাবে রাতারাতি গানটি নিয়ে
হৈ চৈ শুরু হয়ে গেল এবং দেখা গেল অনেক হল মালিক তখন ছবিটি মুক্তির ব্যাপারে ব্যাপক
আগ্রহ দেখালেন। পরের সপ্তাহ থেকে হলের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তেই থাকে। পত্র-পত্রিকায়ও
ছবিটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা প্রকাশিত হলো। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এভাবেই ছবিটি মুক্তি
পেল। ব্যবসা সফল হলো ছবিটি।’
‘নান্টু ঘটক’ ছবির
‘চলে আমার সাইকেল’ গানটি তৈরি প্রসঙ্গে ঙ্গে গাজী
মাজহারুল আনোয়ার ওই বইতে আরও লেখেন, ‘সাবিনা ইয়াসমীনের পরামর্শ অনুযায়ী আহমেদ ইমতিয়াজ
বুলবুল আমাকে এই ছবির সঙ্গীত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন। ছবিটি শুরু করার পর একদিন প্রখ্যাত
শিল্পী এন্ড্রু কিশোর এবং ইমতিয়াজ বুলবুল আমার মালিবাগের বাসায় এলেন। সেখানে বসেই আমরা
এই গানটি তৈরি করি।
গানটি তৈরি হবার পর প্রখ্যাত শিল্পী এন্ড্রু কিশোর বললেন, ‘গাজী
ভাই, আমার মনে হয় এই গানটি জনপ্রিয়তা পাবে।’ এন্ড্রু
কিশোরের সাথে গানটি গাইলেন গুণী শিল্পী শাম্মী আখতার। পর্দায় এই গানে অভিনয় করলেন চিত্রনায়িকা
অঞ্জনা এবং চিত্রনায়ক ওয়াসিম।
ছবিটি প্রসঙ্গে তাঁর পুত্র সরফরাজ আনোয়ার উপল বলেন, সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার বছরই আমি মুন্সীগঞ্জের ছবিঘর প্রেক্ষাগৃহে
আমি ‘নান্টু ঘটক’ দেখে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছিলাম। পরের
বছরে আমার পিতার কর্মস্থল পিটিআইয়ের স্টাফ ও ছাত্রদের সঙ্গে সোনারগাঁও পিকনিকে গিয়েছিলাম।
সেই আনন্দ ভ্রমণে মাইকে ‘নান্টু ঘটক’ ছবির
‘আমার নাম কালু মিয়া’ গানটি বাজানোর সময় আমার আব্বা
নেচেছিলেন।