The Ambassador News                                       দি অ্যাম্ব্যাসাডর নিউজ

সকল কণ্ঠের প্রতিনিধি

বাংলাদেশে লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনের জন্য ওয়ালটন ও হুয়াওয়ের মধ্যে চুক্তি

বাংলাদেশের টেলিকম খাতের বিটিএস (বেস ট্রান্সসিভার স্টেশন) ব্যবহারের জন্য লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনে অংশীজন হয়েছে ওয়ালটন ও হুয়াওয়ে।

ওয়ালটন আগামী সাত মাসের মধ্যে টেলিকম খাতে লিথিয়াম ব্যাটারি বাংলাদেশে উৎপাদন ও বাজারজাত করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বছরে ৮০ হাজার ব্যাটারি উৎপাদনে সক্ষম। অত্যাধুনিক ও সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় প্রোডাকশন লাইন তৈরি ছাড়াও সারাদেশে ব্যাটারির বিপণন ও বিক্রয়োত্তর সেবা পরিচালনা করবে। লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনে প্রযুক্তিগত সহায়তা, ডিজাইনের নির্দেশনা, কাঁচামাল ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিবে হুয়াওয়ে।

ছবি: সংগৃহীত। 

বহু বছর ধরে বিটিএস টাওয়ার ব্যাকআপ পাওয়ারের উৎসের জন্য লেড-এসিড ব্যাটারির ওপর নির্ভরশীল। ওই সব ব্যাটারি লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির মতো পরিবেশবান্ধব নয়।


লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির চেয়ে লেড ব্যাটারি ৫০ শতাংশ বেশি কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ করে। তা ছাড়া এগুলো বায়ু ও মাটিদূষণের জন্যও দায়ী। অন্যদিকে লেড-এসিড ব্যাটারির সক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম। এর কার্যকারিতা মাত্র ৮০-৮৫ শতাংশ। স্থায়িত্ব ও ব্যাটারি এনার্জি ডেনসিটিও কম। বিটিএসে এসবের জন্য বেশি জায়গা প্রয়োজন হয়।


অন্যদিকে, লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির কার্যকারিতা প্রায় শতভাগ। এ ব্যাটারি যেমন দীর্ঘস্থায়ী, তেমন রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনও কম। পুনর্ব্যবহারে এগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি পরিবেশবান্ধব। ইতোমধ্যে বিটিএস টাওয়ারের ব্যাকআপ পাওয়ার হিসেবে লিথিয়াম ব্যাটারি টেলিকম খাতে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে।

বাংলাদেশে এখনও নিম্নমানের নন-ইন্টেলিজেন্ট লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহৃত হচ্ছে। ওই সব ব্যাটারির স্থায়িত্ব কম এবং রক্ষণাবেক্ষণও জটিল। অন্যদিকে নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (এনএমএস) মাধ্যমে এসব ব্যাটারির ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়। এ ধরনের ব্যাটারি কোনো সাইট থেকে চুরি হলে টেলিকম অপারেটররা সময়মতো শনাক্ত করতে পারে না। ফলে সেই সাইটে ব্যাকআপ পাওয়ার থাকে না। অনেক সময় সাইটটি বন্ধও হয়ে যায়। এ কারণেই এলাকার ব্যবহারকারীরা নেটওয়ার্ক সমস্যার সম্মুখীন হন।

হুয়াওয়ে ও ওয়ালটনের চুক্তি এবং আগামীতে উৎপাদিত উচ্চমানের ইন্টেলিজেন্ট ব্যাটারি টেলিকম শিল্পে খরচ সাশ্রয়, পরিচালনা দক্ষতা বৃদ্ধি ও দুর্যোগ-পরবর্তী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় সহায়ক হবে। বাংলাদেশকে বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে লিথিয়াম ব্যাটারি সহায়ক হবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, বিশ্বে এখন নবায়নযোগ্য শক্তির বিপ্লব চলছে। জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে সোলার ফটোভোলটাইক ও বায়ুচালিত শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। ভবিষ্যতে উন্নয়নের জন্য লিথিয়াম এনার্জি স্টোরেজ প্রযুক্তির প্রয়োজন অনস্বীকার্য। ব্যাটারি উৎপাদনে হুয়াওয়ে ও ওয়ালটনের অংশীজন দারুণ পদক্ষেপ। বিশ্বাস করি, উভয় পক্ষের সহযোগিতা বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান তৈরি ও রপ্তানি পরিসর বাড়ানোর সঙ্গে দেশের জনগণকে উপকৃত করবে।

য়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মঞ্জুরুল আলম অভি বলেন, সব সময় বিশ্বাস করি, উদ্ভাবনই অগ্রগতির চাবিকাঠি। নিজেদের প্রতিটি পণ্য ও সল্যুশন সমুজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। বর্তমানের লক্ষ্য হলো অত্যাধুনিক লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদন কারখানা স্থাপন। এটি বাংলাদেশের টেলিকম শিল্পে বর্তমানে ব্যবহৃত লেড-এসিড ব্যাটারির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেবে। যার ফলে সামগ্রিকভাবে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পাবে। প্রকল্পটি শুধুই ব্যবসায়িক উদ্যোগ নয়; সবুজ পৃথিবী রক্ষার যে অনুপ্রেরণা নিয়ে আমরা কাজ করি, চুক্তিটি সেই লক্ষ্যের দিকে আরেকটি পদক্ষেপ। হুয়াওয়ে উদ্ভাবিত প্রযুক্তির সহায়তায় লিথিয়াম ব্যাটারি শিল্প স্থাপনে সবুজ দেশ গড়তে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারব।


হুয়াওয়ে বাংলাদেশের সিইও প্যান জুনফেং বলেন, হুয়াওয়ের লিথিয়াম ব্যাটারি ১৭০টির বেশি দেশে ৩৪০টির বেশি অপারেটর ব্যবহার করছে। অর্থাৎ বিশ্বের টেলিকম খাতে ব্যবহৃত শক্তির এক-তৃতীয়াংশের প্রয়োজনে এ ব্যাটারি ব্যবহৃত হচ্ছে।


এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে হুয়াওয়ের লিথিয়াম ব্যাটারির বাজারের শেয়ার ৩৫ শতাংশ। অন্যদিকে, ওয়ালটন বাংলাদেশের বহুজাতিক ব্র্যান্ড, যা ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিকস, অটোমোবাইল ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি উৎপাদনে বিশেষভাবে দক্ষ। বাংলাদেশে লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনের জন্য ওয়ালটনের সঙ্গে কৌশলগত অংশীজন হয়েছি। দেশের টেলিকম খাতের যৌথ উদ্যোগ সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে।


পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও শক্তি উৎপাদনে সবুজ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে হুয়াওয়ে। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সুফল বয়ে আনতে টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখা। ওয়ালটনের সঙ্গে হুয়াওয়ের চুক্তিটি তারই প্রতিফলন।


সূত্র: সমকাল। 


নবীনতর পূর্বতন