রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন |
পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের
দেওয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলার অনুমতি দেয়, তার প্রতিক্রিয়া হতে
পারে ভয়াবহ। এমনটাই মনে করছেন তিন বিশ্লেষক। তাঁরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে রাশিয়া দেশটির
আশপাশে ব্রিটিশ সামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালাতে পারে এবং ভয় দেখানোর জন্য পারমাণবিক
অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পারে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, গতকাল শুক্রবার ওয়াশিংটনে
বৈঠক করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
সেখানে তাঁরা মার্কিন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এটিএসিএমএস এবং ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্র
স্টর্ম শ্যাডো দিয়ে রাশিয়ায় হামলার অনুমতি দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বিষয়টি এখন পশ্চিমা বিশ্ব ও ক্রেমলিনের মধ্যকার বিবাদের মূল বিষয়।
পশ্চিমা বিশ্বকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট
ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেনকে দূরপাল্লার
ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলার অনুমতি দেয়, তাহলে ন্যাটো সরাসরি
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, ইউক্রেনে পশ্চিমা ক্ষেপণাস্ত্র
কর্মসূচি যদি ন্যাটোর সামরিক কর্মীদের মাধ্যমে করা হয়, তবে জোটটি সরাসরি ক্রেমলিনের
সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়বে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত
সংবাদমাধ্যম কথা বলার সময় এই হুঁশিয়ারি দেন।
জার্মানির হামবুর্গ ইনস্টিটিউট ফর পিস রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি
পলিসির অস্ত্র বিশেষজ্ঞ উলরিখ কুয়েন বলেছেন, এমন পরিস্থিতিতে পুতিন পারমাণবিক শক্তি
ব্যবহার করার বার্তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে—এমন সম্ভাবনা
তিনি উড়িয়ে দেন না। উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিমাদের ভয় দেখাতে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার
সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তিনি বলেন, ‘তবে এ ক্ষেত্রে সংঘাত নাটকীয়ভাবে উসকে উঠবে।’ তিনি
জানান, ইউক্রেনেও এ রকম পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা হতে পারে।
রাশিয়া সর্বশেষ পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা করেছিল ১৯৯০ সালে;
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ঠিক আগের বছর। ফলে একটি পারমাণবিক পরীক্ষা বা বিস্ফোরণ আরও
বিপজ্জনক যুগের সূচনার ইঙ্গিত দেবে বলে মনে করেন উলরিখ কুয়েন।
একই ধরনের অবস্থান অস্ট্রিয়ার ইনসব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা
বিশেষজ্ঞ গেরহার্ড ম্যাঙ্গটের। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ানরা পারমাণবিক পরীক্ষা চালাতে পারে।
তারা প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা দেশের পূর্বে কোথাও একটি কৌশলগত পারমাণবিক
অস্ত্র বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে শুধু এটি দেখানোর জন্য যে, প্রয়োজন হলে আমরা পারমাণবিক
ব্যবহার করব।’
যুক্তরাষ্ট্রের বেলায় রাশিয়া ভয় দেখানোর নীতি অবলম্বন করলেও ব্রিটেনের
বেলায় দেশটি সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। এ বিষয়ে ক্রেমলিনের সাবেক উপদেষ্টা সের্গেই
মারকভ তাঁর টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেছেন, ব্রিটেন যদি ইউক্রেনকে তাদের স্টর্ম শ্যাডো
ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলার অনুমতি দেয়, তাহলে মস্কো লন্ডনের বিরুদ্ধে সরাসরি
যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে।
মারকভের অনুমান, রাশিয়া সম্ভবত মস্কোতে ব্রিটিশ দূতাবাস এবং লন্ডনে
তার নিজস্ব দূতাবাস বন্ধ করে দেবে। পাশাপাশি রাশিয়ার কাছাকাছি অবস্থিত ব্রিটিশ সামরিক
ড্রোন ও যুদ্ধবিমানগুলোতে আক্রমণ করবে। উদাহরণস্বরূপ, রোমানিয়া ও পোল্যান্ডে ব্রিটিশ
ঘাঁটিতে হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। এ ছাড়া, কৃষ্ণসাগরের ওপর দিয়ে স্টর্ম শ্যাডো বহন
করে নিয়ে যাওয়ার সময় ব্রিটিশ এফ-১৬ যুদ্ধবিমানেও হামলা করতে পারে রাশিয়া।
সূত্রঃ আজকের পত্রিকা